ওয়েব ডেস্ক: আবু তাইয়্যেব খান
আজ আন্তর্জাতিক কেবিন ক্রু দিবস। ১৯১২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এই পেশায় নিয়োজিত প্রায় ছয় লাখ কেবিন ক্রু’র আত্মত্যাগের গুরুত্ব অনুধাবন করে দিনটিকে আন্তর্জাতিক কেবিন ক্রু অ্যাপ্রিসিয়েশন দিবস হিসেবেও উদযাপন করা হয়।
২০১৫ সালে কানাডা ইউনিয়নের উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী ৪৮০ জন কেবিন ক্রু’র অংশগ্রহণে টরোন্টোতে এই দিনটি প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে দিবসটি জাতিসংঘের ইভেন্ট ডে হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ‘বাংলাদেশ বিমান ক্যাবিন ক্রু ইউনিয়ন’ দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে আসছে।
সমগ্র পৃথিবীতে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব পেশা রয়েছে তন্মধ্যে কেবিন ক্রু অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রুরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় স্বল্প সুবিধা সম্বলিত পরিবেশে কেবিন ক্রুরা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। একজন ভ্রমণকারীর ভ্রমণকে সর্ব বিবেচনায় নিরাপদ করে তোলাই কেবিন ক্রুদের মূল কর্তব্য।
কেবিন ক্রুদের দুইভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত ফেস অব দ্য এয়ারলাইন হিসেবে। কারণ কেবিন ক্রুদের আচরণ ও পেশাদারিত্বই এয়ারলাইনসগুলোকে যাত্রী ধরে রাখা এবং নতুন যাত্রীদের আকৃষ্ট করে। দ্বিতীয়ত লাস্ট লাইন অব দ্য ডিফেন্স হিসেবে। কারণ আকাশে উড্ডয়নের পরে যেকোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য কেবিন ক্রু ছাড়া আর কোন সিকিউরিটি পার্সোনাল থাকেন না।
ফ্লাইটে প্রতিটি কেবিন ক্রুকে নিরাপত্তার বিষয়টিকে মাথায় রেখে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। ডিউটি শুরু করতে হয় মৃত্যু ঝুঁকি ও সম্ভাব্য দুর্ঘটনাকে মাথায় নিয়ে। তথাপিও প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে হাসিমাখা মুখে শান্তভাবে, দৃঢ়চিত্তে এবং ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সকল পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ কেবিন ক্রুদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
প্রতিটি সফল উড্ডয়ন ও অবতরণ একজন কেবিন ক্রুকে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়িক ভ্রমণ, রাজনৈতিক ভ্রমণ, চিকিৎসা জন্য ভ্রমণ, আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি নানা কারণে আকাশযাত্রা বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই থাকেন কেবিন ক্রুদের ভ্রমণ সঙ্গী। কেবিন ক্রুদের বলা হয়- ফার্স্ট রেসপনডার।
সমুদ্রে, বনে-জঙ্গলে কিংবা মরুভূমিতে জরুরি সারভাইভালে কেবিন ক্রুদের প্রশিক্ষণ অবাক করার মতো। প্রতিটি কেবিন ক্রু একটি সুপ্রশিক্ষিত ফার্স্ট এইডারও বটে। কোনো যাত্রী হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে কেবিন ক্রুরাই প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন। জরুরি ঘোষণা দিয়ে ডাক্তার অন বোর্ড না পাওয়া গেলে কেবিন ক্রুই সেই পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে অসুস্থ যাত্রীকে সুস্থ করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
এছাড়াও কেবিন ক্রুদের হার্টঅ্যাটাক, হাইপোক্সিয়া, হাইপারভেন্টিলেশন, হাইপোগ্লাইসেমিয়া, হাইপারগ্লাইসেমিয়া, চকিং, নোজ ব্লিডিং এবং প্রেগনেন্ট ডেলিভারির দায়িত্বও পালন করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তার ব্যাবসায়িক স্লোগান হিসেবে সেইফটিকে বেছে নিয়েছে এবং এক্ষেত্রে ইতোমধ্যে তারা পাঁচ তারকার তকমাও পেয়েছে। নিরাপত্তার প্রতিটি ক্ষেত্রে বিমানের কেবিন ক্রুদের রয়েছে সফল বিচরণ। জন্মলগ্ন থেকে বিমান বেশ কয়েকবার জরুরি অবতরণ অথবা জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে।
দুবাই, চট্টগ্রাম ও রেঙ্গুনে সফলভাবে ক্রাশ ল্যান্ডিংয়ে সব যাত্রীকে নিরাপদে অপসারণ করা হয়েছিল। লন্ডন ফ্লাইটে বোম্ব থ্রেট এমনকি সর্বশেষ দেশের আকাশে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাও সফলভাবে দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ক্রুদের সাহসিকতার জন্য তাদেরকে ‘হিরো অব বিমান’ উপাধি দিয়েছেন।
কেবিন ক্রুদের প্রতিটি ক্ষণ মিনিটে নয় বরং সেকেন্ডে নির্ধারিত হয়। জরুরি অবস্থায় আগুন নেভাতে একজন কেবিন ক্রু মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময় পান। একটি বোয়িং ৭৭৭ বিমানের ৪১৯ জন প্যাসেঞ্জারকে অপসারণ করতে জরুরি মুহূর্তে কেবিন ক্রুদের প্রয়োজন সর্বোচ্চ ৯০ সেকেন্ড। পেশাদারিত্বের এই দক্ষতায় সত্যিকার অর্থেই আকাশ হয়ে উঠুক শান্তির নীড়।
লেখক: কেবিন ক্রু, বাংলাদেশ বিমান